বেদের পুনরুদ্ধার (২)
ঔঁ = সচ্চিদানন্দঘন বলে ব্যাখ্যা করা হয় এবং সমস্ত কিছু অর্থাৎ এই জগতের এবং ব্রহ্মাণ্ডের উৎস বলে মান্য করা হয়। কিন্তু কেন? এর পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে?
এই আলোচনার আগে আরো কিছু জিনিস স্পষ্ট ভাবে বলা যাক... এখনকার বিজ্ঞানীরা যা কিছু আবিস্কার করছেন তা কিন্তু প্রথম থেকে বিদ্যমান। মানে Discover করছেন এই মহাকাশ এর সমস্ত কিছুই। এটাকে invent বলা যাবে না। সেরকমই এই সমস্ত শ্লোকের মূল ভাব আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারণ সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ এর প্রথম লেখক বলে আমরা যাকে জানি তিনি হলেন পাণিনি। সেই পাণিনি ই তার অস্টাধ্যাই গ্রন্থে লিখেছেন যে সংস্কৃত ব্যাকরণ এক সমুদ্রের সমান যা কেবলমাত্র "ऐंद्र व्याकरण" বা বাংলায় বললে "ইন্দ্র ব্যাকরণ" এ পাওয়া যায়। তার কাছে পাণিনির ব্যাকরণ একটি গরুর ক্ষুরের সমান। এই সম্বন্ধে একটি শ্লোক এর Full Information দেয়....
নিচে যে ব্যাকরণ বইয়ের ভূমিকার পৃষ্ঠাটি দিলাম সেখানে লেখা আছে যে পাণিনি নিজেই তার গ্রন্থে লিখেছিলেন -
" ঋকবেদ অনুযায়ী সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন ব্রহ্মা। ব্রহ্মা সেই জ্ঞান দেন বৃহস্পতিকে। বৃহস্পতি দেন ইন্দ্রকে এবং ইন্দ্র দেন ভরদ্বাজ কে এবং তার পর ঋষিদের কাছে সেই জ্ঞান পৌঁছায়। তার অনেক পরে পাণিনি এই ব্যাকরণ লিখেছিলেন। "
শ্লোক -
यान्युज्जहार माहेन्द्रात् व्यासो व्याकरणार्णवात् । पदरत्नानि किं तानि सन्ति पाणिनिगोष्पदे ।।
অর্থাৎ ব্যাসমুনি যে পদগুলি ব্যবহার করেছেন তা ইন্দ্র ব্যাকরণে রয়েছে। এগুলো পাণিনির ব্যাকরণে নেই। এতে ইন্দ্র ব্যাকরণকে সমুদ্র বলা হয়েছে এবং তার তুলনায় পাণিনি ব্যাকরণকে গরুর খুরের মতো ছোট বলা হয়েছে। এটি দেববোধের অতিরঞ্জন হতে পারে, তবে এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে পাণিনির আগে ঐন্দ্র ব্যাকরণ ছিল যা বিশাল ছিল।
তার মানে এই দাড়ালো যে ইন্দ্র বা ভরদ্বাজ এর যে ব্যাকরণ সেটা আমাদের কাছে এখন কোনোভাবেই উপলব্ধ নেই। তাও আমরা চেষ্টা করি যা কিছু উপলব্ধ আছে বা আরো ভালোভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে এখনও যা কিছু অবশিষ্ট আছে সেই সীমিত জ্ঞান দিয়েই আমরা এই সমস্ত শ্লোকের পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করছি। এটাও এক প্রকার Discover করাই বলা যায়।
মূল শ্লোকে আসার আগে কিছু শব্দের সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী সঠিক অর্থ এবং সমাস জানাও দরকার যে শব্দগুলো এর পরে লেখার মধ্যে বার বার আসবে... যাদের কাছে পাণিনির সংস্কৃত ব্যাকরণ বই আছে তারা দেখতে পারেন অথবা নিচে দেওয়া লিংকের সাহায্যে হয়তো কিছুটা সাহায্য পেতে পারেন...
https://sa.m.wiktionary.org/wiki/%E0%A4%AE%E0%A5%81%E0%A4%96%E0%A5%8D%E0%A4%AF%E0%A4%AA%E0%A5%83%E0%A4%B7%E0%A5%8D%E0%A4%A0%E0%A4%AE%E0%A5%8D
যেমন -
১) নিরাকার শব্দের প্রকৃত অর্থ —
যা থেকে কোনো আকার নির্গত হয় বা কোনো আকারের সৃষ্টি হয়।
निराकारः, पुं, (निर्गत आकारो देहादिदृश्य- स्वरूपं यस्मादिति । निरादय इति समासः ।)
২) ঔঁ —
ॐ > ब्रह्मन्
ब्रह्मन् पुं।
ब्रह्मा
समानार्थक:ब्रह्मन्,आत्मभू,सुरज्येष्ठ,परमेष्ठिन्,पितामह,हिरण्यगर्भ,लोकेश,स्वयम्भू,चतुरानन,धातृ,अब्जयोनि,द्रुहिण,विरिञ्चि,कमलासन,स्रष्टृ,प्रजापति,वेधस्,विधातृ,विश्वसृज्,विधि,नाभिजन्मन्,अण्डज,पूर्व,निधन,कमलोद्भव,सदानन्द,रजोमूर्तिन्,सत्यक,हंसवाहन,क,आत्मन्,शम्भु
আপাতত এই দুটোই লিখলাম, পরে প্রয়োজন অনুসারে আবার লিখবো...
এবার আসি মূল শ্লোকে যেটা আগের পর্বে দিয়েছিলাম-
ঔঁ — বিস্বসৃজঃ — অর্থাৎ যা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে
অদঃ — সেই পরব্রহ্ম
পূর্ণম্ — সর্বপ্রকারে পূর্ণ
ইদম্ — এই জগৎও
পূর্ণম — পূর্ণ'ই,
(কারণ)
পূর্ণাৎ — সেই পূর্ণ পরব্রহ্ম হতেই
পূর্ণম্ — এই পূর্ণ
উদচ্যতে — উৎপন্ন হয়েছে
পূর্ণস্য — পূর্ণের
পূর্ণম্ — পূর্ণকে
আদায় — নিয়ে নিলেও অর্থাৎ বাদ দিলেও
পূর্ণম্ — পূর্ণ
এব — ই
অবশিষ্যতে — অবশিষ্ট থাকে
এবারে আমরা যদি এটাকে মহাবিশ্বের সায়েন্টিফিক বিশ্লেষণ করি বা বোঝার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের Black Hole আর White Hole theory এর ব্যাপারে জানতে হবে।
আমরা অনেকেই Black hole এর ব্যাপারটা জানি কিন্তু white hole খুব কম লোকই জানে।
" শ্বেত বিবর বা White Hole হল Black Hole বা কৃষ্ণ বিবরের বিপরীত ঘটনা। কৃষ্ণ বিবর সবকিছু নিজের মধ্যে শোষণ করে নেয়, আর শ্বেত বিবর সবকিছু বাইরে বের করে দেয়। এজন্য এটি খুব উজ্জ্বল।"
তাহলে যদি বলা যায় এই মহাবিশ্ব কোনো white hole থেকে তৈরি হয়েছে এবং শেষ হবে black hole এ গিয়ে। এর পর পুরো শ্লোকের মানে বোঝার চেষ্টা করে দেখুন হয়তো কিছুটা বুঝতে পারবেন।
অণু - পরমাণুর ব্যাপারটাও কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে কি? পৃথিবীতে এবং মহাবিশ্বে কোনোকিছুই পার্মানেন্ট নয়। যে কোনো জড়ো পদার্থ তার ভৌতিক পরিবর্তন এবং রাসায়নিক পরিবর্তন এর ব্যাপারটা কি কিছুটা ধারণা করা যাচ্ছে? যার শুধুমাত্র রূপান্তর হয়, সম্পূর্ণ বিনাশ হয় না অর্থাৎ Zero হয়ে যায় না। কোনো না কোনো প্রকারে এই মহাবিশ্বে থেকেই যায়... আলোচনা চলুক.. মতামতও প্রয়োজন...
এবারে ভাবুন ঈশ্বরকে কেন নিরাকার বলা হয়... আর প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা কতটা উন্নত হলে এমন শ্লোক লিখে এই সমস্তটা বর্ণনা করা যায় একটা মাত্র শ্লোকে.... এরকম উদাহরণ একটা নয় হাজার হাজার আছে ঋকবেদে।
পরবর্তী পর্বে আরো নতুন কোনো শ্লোক এর সায়েন্টিফিক বিশ্লেষণ এবং আলোচনা নিয়ে আসব...
যারা প্রথম পর্ব পড়েননি তাদের জন্যে লিংক কমেন্টে এ রইল...
© প্রভাত ঘোষ
No comments:
Post a Comment